মারিজুয়ানার থেকেও ভয়ংকরতরুণ সমাজের অদৃশ্য ধ্বংস-যাত্রা


 অনলাইন জুয়ার ভয়াবহতা: তরুণ সমাজের অদৃশ্য ধ্বংসযাত্রা


বর্তমান প্রযুক্তি ও ইন্টারনেটের সহজলভ্যতার কারণে তরুণ প্রজন্ম অনলাইন জুয়ার প্রতি আসক্ত হয়ে পড়ছে। এটি এখন আর শুধুমাত্র ক্যাসিনো বা নির্দিষ্ট স্থানের মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই, বরং মোবাইল ফোন বা কম্পিউটারের মাধ্যমে সহজেই যে কেউ এতে জড়িয়ে পড়তে পারে। অনলাইন গেমের মতোই জুয়ার আসক্তি ধীরে ধীরে তরুণদের জীবনের একটি অংশ হয়ে উঠছে, যার ভয়াবহ পরিণতি তারা নিজেরাও বুঝতে পারছে না।


কেন অনলাইন জুয়া এত ভয়ংকর?


১. অদৃশ্য আসক্তি:

মদ, গাঁজা বা অন্যান্য মাদকের মতো অনলাইন জুয়া সহজে চিহ্নিত করা যায় না। বাইরে থেকে কেউ বুঝতেও পারে না যে একজন ব্যক্তি এতে আসক্ত হয়ে পড়েছে। ফলে পরিবার ও সমাজের নজর এড়িয়ে এটি ছড়িয়ে পড়ছে।


2. অর্থনৈতিক ধ্বংস:

প্রথমদিকে অনেকে বিনোদনের জন্য শুরু করলেও ধীরে ধীরে এটি তাদের আর্থিক বিপর্যয়ের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। টাকা জেতার লোভে অনেকেই বারবার বাজি ধরে, কিন্তু বেশিরভাগ সময় তারা ক্ষতির মুখে পড়ে। অনেক তরুণ নিজেদের জমানো টাকা, পরিবারের সঞ্চয় বা ঋণ নিয়ে জুয়ার ফাঁদে পা দিচ্ছে।


3. মানসিক ও সামাজিক বিপর্যয়:

হেরে যাওয়ার পর হতাশা, দুশ্চিন্তা ও আত্মগ্লানি গ্রাস করে। অনেক সময় এই হতাশা থেকে তারা চুরি, প্রতারণা এমনকি আত্মহত্যার মতো ভয়াবহ সিদ্ধান্ত পর্যন্ত নিয়ে ফেলে। পরিবার ও বন্ধুবান্ধবের সঙ্গে সম্পর্ক নষ্ট হয়ে যায়।


4. অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়া:

টাকা জোগাড়ের জন্য অনেক তরুণ চুরি, প্রতারণা বা মাদক চোরাচালানের মতো অপরাধমূলক কাজে যুক্ত হয়ে পড়ে। এর ফলে তারা আইনগত ঝামেলায় জড়িয়ে পড়ে এবং ভবিষ্যৎ ধ্বংস হয়ে যায়।

কিভাবে এই ধ্বংসযাত্রা রোধ করা যায়?

সচেতনতা বৃদ্ধি: পরিবারের সদস্যদের উচিত সন্তানের অনলাইন কার্যক্রমের ওপর নজর রাখা এবং তাদের সচেতন করা।


শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ভূমিকা: স্কুল-কলেজে জুয়ার কুফল সম্পর্কে আলোচনা করা উচিত, যাতে শিক্ষার্থীরা এ বিষয়ে আগে থেকেই সতর্ক হতে পারে।


সরকারি নিয়ন্ত্রণ: সরকারকে আরও কঠোর আইন প্রণয়ন করতে হবে এবং অনলাইন জুয়ার প্ল্যাটফর্মগুলোর কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণ করতে হবে।


বিকল্প বিনোদন: তরুণদের খেলাধুলা, সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড ও অন্যান্য গঠনমূলক কাজে উৎসাহিত করা প্রয়োজন, যাতে তারা নেতিবাচক আসক্তি থেকে দূরে থাকতে পারে।


অনলাইন জুয়া ধীরে ধীরে তরুণ প্রজন্মকে গ্রাস করছে, যা মাদকাসক্তির চেয়েও ভয়ংকর পরিণতি ডেকে আনছে। এটি শুধু ব্যক্তির নয়, পুরো সমাজের জন্য এক বড় হুমকি। তাই সবাইকে এ বিষয়ে সচেতন হতে হবে এবং যথাযথ পদক্ষেপ নিতে হবে, যাতে তরুণ সমাজ একটি সুস্থ ও নিরাপদ ভবিষ্যৎ গড়তে পারে।

Post a Comment

Previous Post Next Post