দ্বীপ জেলা ভোলার চরফ্যাশন উপজেলার সাগর মোহনাঘেরা তারুয়া সৈকত। তারুয়া নামকরণের লিখিত কোনো ইতিহাস নেই। এই চরটি প্রকৃতির সুনিপুণ নিখুঁত এক সৃষ্টি। প্রায় চার দশক আগে বঙ্গোপসাগরের কোল ঘেঁষে জেগে ওঠা এই চরের মনোমুগ্ধকর দৃশ্য প্রতিনিয়ত ভ্রমণপিপাসুদের মুগ্ধ করে। সবুজ বন, সৈকত পাড়ে বালুর ঝলকানি, লাল কাঁকড়ার বিচরণ আর হরেক রকমের জীববৈচিত্র্যের সমারোহে ভরপুর এ চরটি যেন প্রকৃতির এক অনন্য উপহার।
চরফ্যাশন উপজেলা শহর থেকে প্রায় ৩০ কিলোমিটার সড়কপথ এবং ১৫ কিলোমিটার নদীপথ পাড়ি দিয়ে তারুয়া চরের মোহনীয় রূপ চোখে পড়ে। প্রায় সাত কিলোমিটার দীর্ঘ এই সৈকতের একপাশে বঙ্গোপসাগর আর অন্য পাশে বিস্তীর্ণ চারণভূমি, যা শেষ হয়েছে সৈকতঘেরা ম্যানগ্রোভ বনে।
স্থানীয় জেলেরা জানিয়েছেন, প্রায় ৪০ থেকে ৪৫ বছর আগে বঙ্গোপসাগরের বুকচিরে জেগে ওঠে এই চর। ওই চর মোহনায় একসময়ে শত শত তারুয়া নামের এক প্রকার মাছ ধরা পড়ত জেলেদের জালে। মাছের কারণেই এ চরের নামকরণ করা হয়েছে তারুয়া। শীত মৌসুমে এখানে হাজারো পর্যটক ঘুরতে আসে। অধিকাংশ পর্যটক তাঁবু টানিয়ে থাকে। নিরাপত্তা নিয়ে কোনো সমস্যা নেই।
ঢাকা থেকে তারুয়া সৈকতে ঘুরতে আসা লিটন, আরিফ ও শাহাবুদ্দিন বলেন, 'তারুয়া সৈকত প্রকৃতি প্রেমীদের জন্য চমৎকার জায়গা। এখানে প্রকৃতির অপার সৌন্দর্যের মাঝে হারিয়ে যেতে যে কারো ইচ্ছা করবে।'
একদিনের জন্য ভোজন বিলাসে ঘুরতে আসা পর্যটক মামুন বলেন, 'আমি আমার পরিবারের সদস্যদের নিয়ে বিগত বছরে কক্সবাজার, কুয়াকাটা গিয়েছি। সেখানকার থেকে কোনো অংশে কম নয় তারুয়া সৈকত। পর্যটকদের জন্য পর্যাপ্ত সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করা যায়, তাহলে এটি দেশের দক্ষিণাঞ্চলের অর্থনৈতিক চিত্র বদলে দিতে পারে। সরকার যদি এখানে পৃষ্ঠপোষকতা করে তাহলে বাংলাদেশের মধ্যে অন্যতম পর্যটন স্পট হবে।'
এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক মো. আজাদ জাহান বলেন, ‘জেলার পুরো দ্বীপটিতেই পর্যটনের অপার সম্ভাবনা রয়েছে। এর মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ হলো মনপুরা, ঢালচরের তারুয়া সৈকত ও চর কুকরি-মুকরি। এই জায়গাগুলোতে পর্যটকদের জন্য নিরাপদ ও সহজ যোগাযোগব্যবস্থার জন্য পরিকল্পনা রয়েছে। তারুয়া সৈকতের জন্য আমরা সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে কথা বলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেব, যাতে পর্যটকরা এখানে নির্বিঘ্নে যাতায়াত ও থাকতে পারে সেটির বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
Post a Comment