ময়মনসিংহের নান্দাইলে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা করে ১৫ দিন পরই আপস করেছেন তাহমিনা আক্তার রিপা নামের এক মহিলা দল নেত্রী।
তাহমিনা আক্তার রিপা বর্তমানে ময়মনসিংহ উত্তর জেলা মহিলা দলের সহ-সভাপতি, নান্দাইল উপজেলা মহিলা দলের আহ্বায়ক ও সাবেক উপজেলা পরিষদের মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান।
মামলার অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপির মনোনীত প্রার্থী বীর মুক্তিযোদ্ধা সাবেক সংসদ সদস্য খুররম খান চৌধুরী ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে নির্বাচনে অংশ নেন। ২০১৮ সালের ২২ ডিসেম্বর সন্ধ্যায় নিজ বাসার নিচে মহিলা দল নেত্রী তাহমিনা আক্তার রিপার স্বামী রফিকুল ইসলাম ভূঁইয়া পোস্টার টাঙাতে যান। সেসময় উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান হাসান মাহমুদ জুয়েলের নেতৃত্বে তার লোকজন দেশীয় অস্ত্র নিয়ে হামলা চালিয়ে রফিকুলকে কুপিয়ে জখম করেন। এছাড়া তার মুদি দোকান থেকে লুটপাট করে ৫ লাখ ৪০ হাজার টাকার ক্ষতি করেন। এ ঘটনার পর আহত রফিকুল প্রথমে ময়মনসিংহ, ঢাকায় ও পরে ভারতের ভেলোর থেকে চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ হন।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকারের সময় তাহমিনা আক্তার রিপা ও তার স্বামী রফিকুল মামলা করতে সাহস পাননি। ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা ভারতে পালিয়ে যাওয়ার পর থেকেই মামলা করে ওই ঘটনায় জড়িতদের বিচারের মুখোমুখি করতে স্বামী-স্ত্রী পরিকল্পনা করেন। সে অনুযায়ী চলতি বছরের ৪ জানুয়ারি আওয়ামী লীগ নেতা নান্দাইল উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান হাসান মাহমুদ জুয়েলকে প্রধান আসামি করে ১৬ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত ১৩০-১৫০ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেন ভুক্তভোগী রফিকুল ইসলাম। আসামিদের মধ্যে আওয়ামী লীগসহ যুবলীগ কর্মীরাও রয়েছেন।
কিন্তু মামলার ১৫ দিন পর ১৯ জানুয়ারি আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের সঙ্গে আপস মীমাংসা করেন মহিলা দল নেত্রী তাহমিনা আক্তার রিপা। এদিন ৩০০ টাকার স্ট্যাম্পে স্বামী রফিকুলকে স্বাক্ষর করানো হয়। এমন ঘটনায় উপজেলাজুড়ে আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছে। অনেকে বলছেন, মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের সঙ্গে আপস করা হয়েছে। যদিও মহিলা দল নেত্রীসহ তার স্বামী টাকা লেনদেনের বিষয়টি অস্বীকার করেন।
বক্তব্য জানতে চাইলে মামলার বাদী রফিকুল ইসলাম ভূঁইয়া জাগো নিউজকে বলেন, আমার চিকিৎসায় ১৫ লক্ষাধিক টাকা খরচ হয়েছে। আসামিদের বিচারের আওতায় আনতেই মামলা করেছিলাম। তবে আসামিদের পরিবারের লোকজন এসে কান্নাকাটি করে মামলা তুলে নেওয়ার অনুরোধ করেন। তাই মানবিক বিবেচনায় আপস করেছি। কোনো আসামির কাছ থেকে টাকা নিইনি।
রফিকুলের স্ত্রী উপজেলা মহিলা দলের সাবেক আহ্বায়ক ও উপজেলা পরিষদের সাবেক মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান তাহমিনা আক্তার রিপা বলেন, আসামিদের পরিবারের সদস্যরা আমার হাত-পা ধরে কান্নাকাটি করেছে। তাই আমার কথায় স্বামী আপস করেছেন।
তিনি বলেন, স্ট্যাম্পের মাধ্যমে দুপক্ষের লিখিত আপসনামা থানার ওসির কাছে দিয়েছি। তবে ওসি চাচ্ছেন না আমরা আপস করি। ওসি আমাকে বলেন, আপস করতে হলে আদালতে যান।
এ বিষয়ে নান্দাইল মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. ফরিদ আহমেদ বলেন, ডাক্তারি রিপোর্ট না আসা পর্যন্ত মামলার চার্জশিট হবে না। আর চার্জশিট না হলে আপস করা যাবে না। আপস মীমাংসার বিষয় আদালতে। পুলিশ মামলার আসামিদের গ্রেফতার করতে চেষ্টা করছে।
Post a Comment