মুন্সীগঞ্জ ও চাঁদপুরের সীমানাধীন নাছিরারচর মেঘনা নদীতে বালু উত্তোলন নিয়ে দ্বন্দ্বে জলদস্যু কিবরিয়া মিজি বাহিনীর গুলিতে জহির বাহিনীর দুইজন নিহত ও একজন গুলিবিদ্ধর ঘটনায় হত্যা মামলায় ২৪ জনের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। এ হত্যা মামলায় গুলিবিদ্ধ আইয়ুব আলীকেও করা হয়েছে ৫ নাম্বার আসামি। গত মঙ্গলবার রাতে চাঁদপুর মতলব উত্তর থানায় এ মামলা দায়ের করা হয়।
তবে অভিযোগ উঠেছে অভিযুক্তদের নাম বাদ দিয়ে মামলা হওয়ায় হতাশ মামলার বাদি আনোয়া বেগম ও তার পরিবারের লোকজন। আনোয়ারা বেগম বলেন, আমি ও আমার স্বামী পড়াশুনা জানিনা। এ মামলায় কে? বা কারা- আসামি হবে সেটাও আমাকে জিজ্ঞাসা করেনি পুলিশ। তারা সবকিছুই রেডি করে আমাকে একটি কাগজে স্বাক্ষর করতে বলেন। পরে আমি সেই কাগজে স্বাক্ষর করেছি। কি লেখা ছিলো আমার তো জানা নেই।
তিনি আরো বলেন, আমাদের অভিযোগ কিবরিয়া মিজি ও তার বাহিনীর লোকজনের বিরুদ্ধে। কিন্ত পুলিশ তাদের নাম বাদ দিয়ে উল্টো গুলিবিদ্ধ আইয়ুব আলী ও জহিরের বিরুদ্ধে মামলা দিয়েছে। তিনি আরও বলেন, আমরা গরীব মানুষ। আমার কি ছেলে হত্যার বিচার পাবো? তাদের টাকা আছে, ক্ষমতা আছে, তাই তাদের নাম মামলা থেকে বাদ পড়ে।
এদিকে কোন অদৃশ্য শক্তির কারণে অভিযুক্ত কিবরিয়া মিজি ও তার ডাকাত বাহিনীর নাম বাদ পড়ায় এই নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে জনমনের মাঝে। অভিযোগ আছে চাঁদপুর নৌ-পুলিশ সুপার মুসফিকুর রহমান, মতলব উত্তর থানার অফিসার ইনচার্জ রবিউল আলম ও মোহনপুর নৌ-পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ মোহাম্মদ আলীর বিরুদ্ধে। আর্থিক অনৈতিক সুবিধা গ্রহণ করে তারা অভিযুক্তদের নাম বাদ দিয়ে গুলিবিদ্ধর নামে মামলা দিয়েছে।
গুলিবিদ্ধ আইয়ুব আলীর স্বজনরা বলেন, জলদস্যু কিবরিয়া বাহিনীর গুলিতে দুইজন নিহত ও আইয়ুব আলী গুলিবিদ্ধ হয়েছে। কিন্তু পুলিশ অনৈতিক সুবিধা গ্রহণ করে অভিযুক্ত কিবরিয়া মিজি, জনি, মিছির বেপারী ও জসিম দেওয়ানের নাম বাদ দিয়ে উল্টো আমাদের নামে মামলা দিয়েছে। এটা অন্যায় ও অবিচার ছাড়া আর কিছুই না।
এ বিষয় নিয়ে মতলব উত্তর থানার ওসি রবিউল হককে ফোন দিলে সে কল কেটে দেয়। পরবর্তীতে তার সাথে একাধিকবার যোগাযোগ করেও তাকে পাওয়া যায়নি।
চাঁদপুর পুলিশ সুপার মুহম্মদ আব্দুর রকিব পিপিএ কাছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, শুনেছি অভিযোগটি বাদি নিয়ে এসেছে। মামলাটি মতলব উত্তর থানায় হলেও তদন্ত করবে নৌ-পুলিশ। তারা তদন্ত করে দেখবেন ঘটনার কে বা কারা জড়িত, সেই অনুযায়ী আইনগত ব্যবস্থা নিবেন।
তবে এ বিষয়ে চাঁদপুর নৌ-পুলিশ সুপার মুসফিকুর রহমানের সাথে একাধিকবার যোগাযোগ করেও তাকে পাওয়া যায়নি। পরবর্তীতে ফোনেও পেলেও মিটিং আছেন বলে পরে কথা বলবে বলে ফোন রেখে দেয়।
তবে পুলিশের এমন আচরণ দেখে ক্ষুব্ধ এলাকাবাসী ও পরিবারের লোকজন। অভিযুক্তদের নাম বাদ দিয়ে গুলিবিদ্ধদের নামে মামলা দেওয়ায় মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। তারা বলছেন, এই অবৈধ বালু উত্তোলন নিয়ে দ্বন্দ্বে পরপর তিনটি হত্যা কান্ড ঘটার পরেও টাকা ও ক্ষমতা এবং পুলিশের কিছু অসৎ কর্মকর্তার কারণে বারবার মামলা থেকে রেহায় পাচ্ছে জলদস্যু কিবরিয়া মিজি ও তার বাহিনীর লোকজন। এতে করে তারা আরো বেপরোয়া হয়ে পড়েছে নৌ-পথে।
উল্লেখ : গত ৩০ জানুয়ারি সন্ধ্যায় দিকে বালু উত্তোলন নিয়ে দ্বন্দ্বে মুন্সীগঞ্জ ও চাঁদপুরের নাছিরার চর মেঘনা নদীতে জলদস্যু কিবরিয়া বাহিনী ও তার লোকজনের গুলিতে জহির বাহিনীর সদস্য রিফাত ও রাসেল গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হয়। এ ঘটনায় গুলিবিদ্ধ হয়ে আহত হয়েছে আইয়ুব আলি নামের এক ব্যক্তি।
Post a Comment