টাঙ্গাইলে খাদ্য কর্মীদের সহযোগিতায় চাল-আটা কালোবাজারে বিক্রি!


 টাঙ্গাইলে খাদ্য অফিসের কর্মচারীদের সহযোগিতায় দীর্ঘদিন ধরে চাল ও আটা কালোবাজারে বিক্রির অভিযোগ উঠেছে ডিলার পলাশ আল মাসুদের বিরুদ্ধে। অভিযোগের সতত্যা যাচাইয়ে শহরের আদালতপাড়া কেয়া হলের মোড়ের বিক্রয় কেন্দ্রে গিয়ে তার প্রমাণও পেয়েছেন প্রতিবেদক।


সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, সোমবার বেলা ১১টা ৩৭ মিনিটে হুনুফা বেগম নামের এক নারী ও ১১টা ৪০ মিনিটে শহরের আদালতপাড়া এলাকার ষাটোর্ধ সোনা মিয়া আটার জন্য ডিলার পলাশের বিক্রয় কেন্দ্রে গেলে সেখানে ১৪ বস্তা আটা থাকার পরও বিক্রয় কেন্দ্রের দায়িত্বে থাকা খাদ্য অফিসের নিরাপত্তা প্রহরি ইসমাইল হোসেন তাকে ঘুরিয়ে দেন।


ইসমাইল হোসেন বলেন, আজকে চাল আটা শেষ হয়েছে। আগামীকাল ৯টার পরে আসবেন। এ বিষয়ে সাংবাদিকরা জানতে চাইলে তাদের উপরে চড়াও হন ইসমাইল।


পরে সোনা মিয়া নামের ওই ক্রেতা বলেন, প্রথমে আটা দিতে অস্বীকার করলেও পরবর্তীতে সাংবাদিকদের সহযোগিতায় আমি আটা পেয়েছি।


স্থানীয়দের অভিযোগ, দীর্ঘদিন যাবত এই বিক্রয় কেন্দ্রের দায়িত্বে থাকায় মির্জাপুরে সহকারি উপ খাদ্য পরিদর্শক মো. সোহেল রানা ও সদর উপজেলার নিরাপত্তা প্রহরী ইসমাইল হোসেনের সহযোগিতায় ডিলার পলাশ আল মাসুদের বিক্রয়কর্মীরা কালোবাজারে চাল ও আটা বিক্রি করে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। বিক্রয় খাতায় ক্রেতাদের স্বাক্ষর নেয়ার নিয়ম থাকলেও ডিলারের কালো বাজারের বিষয়টি ধামাচাপা দিতে কথিত নাম উল্লেখ করে নিজেরাই টিপসই দেন।


আদালত পাড়ার রিকশা চালক আয়নাল মিয়া বলেন, গত তিন মাসে দুই বার আটার জন্য গিয়ে ডিলার মাসুদের বিক্রয় কেন্দ্রে থেকে ফিরে এসেছি। ঘরে চাল আটা থাকলেও তারা না করে দিয়ে সেগুলো কালো বাজারে বিক্রি করে থাকেন। যারা এই অনিয়ম বন্ধে খাদ্য অফিসের কর্মচারি তদারকি করে থাকেন, তারা কালোবাজারে চাল আটা বিক্রি করতে সহযোগিতা করেন।


নাসিমা বেগম নামের এক গৃহবধু বলেন, আমাদের মতো গরীব মানুষ লাইনে দাঁড়িয়ে থেকেও চাল আটা পাই না। তবে স্থানীয় প্রভাবশালীরা লাইনে না থেকেও আটা সংগ্রহ করেন। সরকার আমাদের জন্য ন্যায্য মূল্যে চাল আটার ব্যবস্থা করলেও সেগুলো আমাদের ভাগ্যে জুটে না।


নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক ব্যবসায়ী জানান, ডিলার পলাশ আল মাসুদ আওয়ামী লীগের এক প্রভাবশালী নেতা। দলীয় প্রভাব খাটিয়ে আগে কালোবাজারি করতো। এখন খাদ্য অফিসের কর্মচারিদের ম্যানেজ করে কালোবাজারি করছে। এই ডিলার প্রতিদিন ২০ বস্তা আটা বরাদ্দ পেলেও সর্বোচ্চ ৮ বস্তা বিক্রি করে। বাকি সব মিল থেকে বিক্রি করে চলে আসেন। যারা ব্যবস্থা নিবে তারাইতো জড়িত।


বিক্রয় কেন্দ্রের দায়িত্বে থাকা আজাদ খন্দকার বলেন, আমরা কালোবাজারে চাল ও আটা বিক্রি করি না। পরে প্রতিবেদককে ম্যানেজ করতে কয়েকবার ফোন করেন তিনি।


জানতে চাইলে খাদ্য অফিসের নিরাপত্তা প্রহরি ইসমাইল হোসেন বলেন, আমি ডিলারের লোক না। প্রথমে আটার কথা না করলেও পরে তাদের আটা তো দিয়েছি।


মির্জাপুরে সহকারি উপ খাদ্য পরিদর্শক মো. সোহেল রানা বলেন, আমি আজ দায়িত্বে ছিলাম না, ইসমাইল ছিলেন। আমি কালোবাজারের সাথে জড়িত না। এ সময় প্রতিবেদকের সঙ্গে আলাদা বসে কথা বলার প্রস্তাব দেন তিনি।


বিষয়টি সম্পর্কে জানতে চাইলে সদর উপজেলা খাদ্য কর্মকর্তা শেখ মো. মুসা সময়ের কণ্ঠস্বরকে বলেন, চাল ও আটা থাকতে না করার কোন সুযোগ নেই। খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা গ্রহণের আশ্বাস দেন তিনি।

Countdown Timer
00:01

Post a Comment

Previous Post Next Post